বড়লেখা-জুড়ীর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অভিযোগ: সাজুর কর্মকাণ্ডে নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৮:০৮:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক :মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে শোডাউন ও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যের অভিযোগ তুলে কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজুর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কাছে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উভয় অভিযোগের অনুলিপি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি. কে গউছ ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকীর নিকট পাঠানো হয়েছে।
পৃথক দুটি চিঠি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে সাজুর অনুসারীরা ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খছরু ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমোদন ও মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে মৌলভীবাজার-১ আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। তবে ঘোষণার দুদিন পর, ৫ নভেম্বর শরীফুল হক সাজু বড়লেখা ও জুড়ীতে মোটরসাইকেল শোডাউন করেন এবং দুটি পথসভায় অংশ নেন। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে-সাজু ওই সভাগুলোতে বলেন, ‘মনোনয়ন পরিবর্তনশীল। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকুন, যেকোনো সময় সুখবর আসতে পারে।’ তাদের দাবি, এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন পোর্টাল ও স্থানীয় চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি প্রতিপক্ষ জামায়াত-শিবিরও রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাচ্ছে।
এদিকে জুড়ী উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান চুনুর পাঠানো অভিযোগেও একই বক্তব্য উঠে এসেছে। তারা অভিযোগ করেন, সাজুর বক্তব্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর এ ধরনের কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার পরিপন্থী এবং সাংগঠনিক ঐক্য বিনষ্টের শামিল। তাদের দাবি, সাজু পথসভায় বলেছেন, এই মনোনয়নই শেষ নয়। মাঠ জরিপে আমি অনেক এগিয়ে আছি। খুব শিগগিরই সুখবর আসতে পারে। এ বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে আলোচনা-সমালোচনা আরও বেড়ে যায়।
পৃথক দুটি চিঠিতে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, সাজুর এসব কার্যক্রমে নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা আহ্বায়ক কমিটির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে শরীফুল হক সাজুর বিরুদ্ধে জেলা ও কেন্দ্রে অভিযোগ পাঠানোর পর তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনুসারীরা দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তিনি দলকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিএনপির কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান, দলীয় সংকটে অর্থনৈতিক সহায়তা ও প্রবাসী নেতাকর্মীদের ঐক্য গঠনে তাঁর উদ্যোগগুলোকে তারা মূল্যায়ন করেন।
তাদের ভাষ্যে, মনোনয়ন না পাওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন। তবে তারা জানান, সাজু দলীয় সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ সম্মান করেন এবং দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য অটুট। অনুসারীরা বলেন, তিনি কখনোই দলের বাইরে কোনো অবস্থান নেননি। ভবিষ্যতেও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে নেতৃত্বকে সহযোগিতা করবেন বলে তারা মনে করেন। তাদের দাবি, দলের ভেতরে বিভ্রান্তি তৈরি করা বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দেওয়া সাজুর উদ্দেশ্য ছিল না। বরং নির্বাচনী সময়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার কথাই তিনি বলেছেন।


