logo
  • বড়লেখা
  • জুড়ি
  • এক্সক্লুসিভ
  • বিশ্লেষণ
শুক্রবার | ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • বড়লেখা
  • জুড়ি
  • এক্সক্লুসিভ
  • বিশ্লেষণ
  1. প্রচ্ছদ
  2. বিশ্লেষণ

মৌলভীবাজার-১ আসন: নির্বাচনী খেলায় বিএনপির হাতে ‘সেভেন-আপ’ ধরিয়ে দিতে পারে জামায়াত?


প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩৩:০১

রায়হান রাফি :::আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী ) আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর হাতে ‘সেভেন আপ’ ধরিয়ে দিতে পারে জামায়াতে ইসলাম। গত ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর এমনটাই ধারনা করছি। এই আসনের বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্ক, স্থানীয় কর্মীদের সক্রিয়তা ও ভোটার বিভাজনের আশঙ্কা নিয়ে এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। প্রশ্ন উঠছে জামায়াত কী এমনভাবে মাঠে নামতে পারে যাতে ভোটের খেলায় বিএনপির হাতে তারা ‘সেভেন-আপ’ ধরিয়ে দিতে পারে ? অর্থাৎ, জামায়াত কী আসনটি নিজেদের দখলে আনতে পারবে। জামায়াতের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম কী বিএনপির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন? এমন নানা প্রশ্ন এখন ভোটের মাঠে। আসুন একটু কাটাছেঁড়া করি।

মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছিলো। এই আসনে ৮ বার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন এবং বিপরীতে বিএনপি মাত্র ২ বার। ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দলটি ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর থেকে রাজনীতির বাহিরে দলটি। ফলে আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনে মুল লড়াই হবে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। অন্য কোন দল বা প্রার্থী থাকলেও এখানে আলোচনায় থাকার সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই।

আসনটি নিয়ে পর্যালোচনা করে যা দেখেছি, বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এই আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম কোমর বেঁধে মাঠে নামেন। যদিও তিনি ২০১২ সাল থেকে নিরবে কাজ করছেন। ৫ আগস্টের পর মূলত প্রকাশ্যে তিনি মানুষের ধারে ধারে যেতে শুরু করেন। উত্তর শাহবাজপুর থেকে দক্ষিণভাগ, বোবারতল থেকে হাকালুকি। বাগানের চা শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঠের কৃষক সবার সামনেই নিজেকে হাজির করছেন। বার বার তাদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। ফলে জনগণের কাছে আমিনুল ইসলামকে নিয়ে একটি আলাদা হাইপ তৈরি হয়েছে । যেটা আগামী নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করি। এছাড়া গ্রাম পর্যায়ে তার উঠান বৈঠক গুলো বেশ সাড়া ফেলেছে।

আমিনুল ইসলামকে নিয়ে আসনটিতে একটি ছক একেছে জামায়াত যেখানে তারা যেকোনো মূল্যে তাকে পাশ করিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। এজন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা থেকে শুরু করে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ছোট ছোট অনুষ্ঠানেও আমিনুল ইসলাম অংশগ্রহণ করছেন এতে করে সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একইসাথে জনপ্রিয়তা। বিয়ের প্রোগ্রাম  ও মৃত মানুষের জানাজায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি যা আগামী নির্বাচনে প্রেসক্রিপশনের মতো কাজ করবে বলে মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে কোন নির্দিষ্ট প্রার্থীকে মনোনীত না করায় একাধিক প্রার্থী নিজেরা নিজের মতো করে কাজ করছেন। দলের আভ্যন্তরীণ নানা কোন্দল থাকার ফলে নেতাকর্মীরাও বিভক্ত। সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা নিজেদের বলয় ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়েই ব্যস্ত। জনগণকে সময় দিতে পারছেন না। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট দুই প্রার্থী হচ্ছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দীন মিঠু ও কাতার বিএনপি নেতা শরিফুল হক সাজু। কিন্তু দুজন নেতাই কেবল দলীয় গন্ডির ভিতরেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারেননি দু’জনের একজনই। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীই গ্রাম পর্যায়ে বা ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগনের সাথে মতবিনিময় শুরু করেননি। অল্প কিছু সভা সমাবেশ ছাড়া দৃশ্যমান কোন কর্মসূচি চোখে পড়েনি। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়েও তেমন কোন সভা সমাবেশ লক্ষ্য করিনি। এদিক দিয়ে এখনও পিছিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল বিএনপির বড়লেখা ও জুড়ি শাখা। ফলে খালি মাঠে একাই চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলাম। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করলেও গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছেন জামায়াতের এই প্রার্থী । একই গ্রামে একাধিক বার তিনি সফর করছেন। কথা বলছেন জনগণের সাথে। জনগণও মোটামুটি সাড়া দিচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে।

ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় আসনটিতে বিএনপির একটা নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে এর বাহিরে উপজেলার ১৪টি চা বাগানের কয়েক হাজার চা শ্রমিক ও হিন্দু ভোট রয়ছে যা একসময় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। আওয়ামী লীগের পতনের পর সেই ভোটের দিকে নজর পড়েছে জামায়াতের। তাই চা শ্রমিক ও হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা ফন্দি ফিকির শুরু করেছে দলটি৷ হিন্দুদের নিয়ে সমাবেশ, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, তাদের পূজা পার্বণে উপস্থিত হওয়া এবং ভোরে বাগানের চা শ্রমিকদের নিয়ে মতবিনিময় করাসহ তাদের সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে জামায়াতে ইসলাম। এছাড়া আওয়ামীলীগের ভোট টানতেও চিহ্নিত অপরাধীদের দলে ভিড়াবার চেষ্টাও চালাচ্ছে তারা। বিগত বড়লেখা উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে চিহ্নিত আওয়ামী ঘরনার লোক শ্রমিক নেতা অহিদ ও সুমনকে নিজেদের প্রার্থী করে নির্বাচন করায় তারা৷ পরে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় দলটির নেতাকর্মীদের। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হয়রানি করা থেকেও বিরত দলটির নেতারা। ফলে পতিত আওয়ামী লীগের একটা অংশের ভোটও পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রেখে ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে যাওয়া ও নতুন আত্মীয়তা তৈরি করেছে দলটি। ফলে আগামী নির্বাচনে ভোট টানার এটিও একটি কারণ হতে পারে।

অপরদিকে হাসিনার পতনের পর চাঁদাবাজি, মামলা বানিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে বড়লেখা বিএনপি। দলের কিছুসংখ্যক অতি উৎসাহী নেতাদের কারণেরদ ক্রমশ ভোট হারাচ্ছে দলটি। তাদের চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের কারণে অনেকেই বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে যেটি বিএনপির নির্বাচনে হারার বড় কারণ হতে পারে।

এছাড়া পরিচিত অন্তত শতাধিক ভোটারদের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত ছোট্ট জরিপ চালিয়ে যা পেয়েছি তাতে এই আসনে এখনও এগিয়ে আছে বিএনপি। শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ বিএনপির পক্ষে এবং ৩৫ ভাগ মানুষ জামায়াতের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ বাকি ১৫ শতাংশ মানুষ ভোট নিয়ে কোন আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু এই আসনটিতে একসময় জামায়াতের দলীয় ভোট খুবই অল্প ছিলো। বর্তমানে ৩৫ শতাংশ ভোট জামায়াতের জন্য একটি বড় পাওয়া। ডাকসুর নির্বাচনের পর তাদের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে গেছে। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসবে ততো তাদের জনপ্রিয়তা বিএনপিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে এবং একক প্রার্থী নিয়ে এখনই যদি বিএনপি জনগণের কাছে না পৌছায় তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি বড় ধাক্কা খেতে পারে।

বিএনপির জন্য আগামীর নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে জানিয়ে আতঙ্কের কথা বলেছেন স্বয়ং বড়লেখা উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল কাদির পলাশ। তিনি তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লিখেছেন ‘অন্য দলের প্রার্থীরা ভোটারের ধারে ধারে আর আমাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একদিন জেলায় আরেকদিন বিভাগে পরের দিন সেন্ট্রাল নেতৃবৃন্দকে মেনেজ করতে ব্যস্ত। প্রত্যেক আসনে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী, নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে নমিনেশন দেবেন একজনকে আর বাকিদের রাগ ক্ষোভ মিটমাট করতে করতে নির্বাচনের দিন পেরিয়ে যাবে। প্রার্থী আর ভোটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেননা। ‘

তার এই আশঙ্কার কথা ফেসবুকে পোস্ট করার পর একই আশঙ্কা করছেন দলটির তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন মন্তব্য করে এখনই মাঠে নামার বার্তা দিচ্ছেন।

তবে শেষপর্যন্ত জামায়াতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও উপজেলা জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতা ও পৌরসভা জামায়াতের এক নেতার উপর ভোটারদের অনেকেই ত্যক্ত বিরক্ত। এছাড়া তৃণমুল পর্যায়ের কিছু নেতাদের উপরও ভোটাররা বিরক্ত। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে নির্বাচন আসার আগে ভোটারদের আস্থা বাড়ার চাইতে কমার সম্ভাবনা প্রবল।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, মৌলভীবাজার ১ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৯ জন । পুরুষ ভোটার: ১ লাখ ৬০ হাজার ১৬১ । নারী ভোটার: ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭। হিজড়া ভোটার: ১। ভোটারদের একটা বড় অংশ নারী ভোটার। তাই আগামী নির্বাচনে নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করে যে দল নিজেদের কাছে টানতে পারবে সে দলই এগিয়ে থাকার সম্ভবন প্রবল। তাই দেখা যাক শেষপর্যন্ত ভোটের মাঠে কে কাকে গোল দিতে পারে। বিএনপি জামায়াতকে নাকি জামায়াত বিএনপিকে!

বিশ্লেষণ এর আরও খবর
জনতার হাতে বিচার: বড়লেখার গণপিটুনি আমাদের কী শেখায়?

জনতার হাতে বিচার: বড়লেখার গণপিটুনি আমাদের কী শেখায়?

চা-শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

চা-শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

সর্বশেষ সংবাদ
কেন নিজেকে শেষ করে দিলেন ঝুমা?
কেন নিজেকে শেষ করে দিলেন ঝুমা?
মৌলভীবাজার-১ আসন: নির্বাচনী খেলায় বিএনপির হাতে ‘সেভেন-আপ’ ধরিয়ে দিতে পারে জামায়াত?
মৌলভীবাজার-১ আসন: নির্বাচনী খেলায় বিএনপির হাতে ‘সেভেন-আপ’ ধরিয়ে দিতে পারে জামায়াত?
বড়লেখায় বিয়ে করতে এসে কনে ছাড়াই বাড়ি ফিরলেন বর!
বড়লেখায় বিয়ে করতে এসে কনে ছাড়াই বাড়ি ফিরলেন বর!
জনতার হাতে বিচার: বড়লেখার গণপিটুনি আমাদের কী শেখায়?
জনতার হাতে বিচার: বড়লেখার গণপিটুনি আমাদের কী শেখায়?
বড়লেখায় গণপিটুনিতে যুবক নিহত
বড়লেখায় গণপিটুনিতে যুবক নিহত
চা-শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
চা-শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বড়লেখায় তরুণের মৃত্যু নিয়ে রহস্য!
বড়লেখায় তরুণের মৃত্যু নিয়ে রহস্য!
বড়লেখায় গভীর রাতে চলছিল টিলা কাটা, ইউএনওর অভিযান, জরিমানা
বড়লেখায় গভীর রাতে চলছিল টিলা কাটা, ইউএনওর অভিযান, জরিমানা
বড়লেখায় ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারানো নারীর জীবনের দাম লাখ টাকা!
বড়লেখায় ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারানো নারীর জীবনের দাম লাখ টাকা!
© 2025 Barlekha Insider All Rights Reserved

কার্যালয়: বন্দরবাজার, সিলেট
ইমেইল:barlekhainsider@gmail.com

Go to top